মাগুরা প্রতিনিধিঃ মাগুরার জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নে শত বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্য বাহী বড়রিয়ার ঘোড়দৌড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মেলাকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করে ।ঈদের আনন্দের মতোই এই এলাকায় চলে মেয়ে জামাই দাওয়াত দেওয়ার মিছিল। জামাইও আনন্দ চিত্তে মেলা থেকে বাহারি মিষ্টি সামগ্রী ও বড় বড় মাছ আর হরেক রকম খেলনার পসরা নিয়ে হাজির হয় শ্বশুর বাড়ি। প্রতি বাড়িতেই যেন আনন্দের ঢেউ খেলে।

জানা যায়, প্রতি বছর বাংলা ২৮শে পৌষ এই মেলা বসে। এ হিসেবে এবছর ১২ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার ঘোড়দৌড়ের দিন পড়ে। ব্যাপক উৎসাহ -উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে খুলনা বিভাগের অন্যতম এ বৃহৎ মেলাটি হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানের লাখো মানুষের সমাগমে জেলার মহম্মদপুরের বড়রিয়া আনন্দ উৎসবের কেন্দ্রে পরিনত হয়।ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয় মেলার মাঠ। নবরূপে সজ্জিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ।মেলার নির্ধারিত দিন ২৮শে পৌষ হলেও সাধারণত তিন চারদিন আগে থেকেই মেলার কার্যক্রম শুরু হয়ে চলে প্রায় ১৫-২০ দিন পর্যন্ত ।

লোকেমুখে জানা যায়, মহম্মদপুর উপজেলার বড়রিয়া গ্রামের সানু সরদার নামের এক ব্যক্তি এ মেলার প্রতিষ্ঠাতা। প্রায় দু’শ’ বছর আগে মাগুরা সদর উপজেলার বাহারবাগ গ্রামে প্রতি বছরের ২৮শে পৌষ ঘোড়দৌড়ের মেলা বসত যা এখনো চলমান রয়েছে। ঐ মেলায় বড়রিয়া গ্রামের সানু সরদার তার ঘোড়া নিয়ে অংশ নিতেন এবং ছিনিয়ে আনতেন প্রথম পুরস্কার। একবার মেলা কমিটি জোর করে তার ঘোড়াকে পরাজিত ঘোষণা করলে প্রতিবাদ করায় তিনি লাঞ্চিত হন। ক্ষোভে-দুঃখে পরের বছর থেকেই নিজ গ্রামে একই দিনে শুরু করেন মেলা। কালক্রমে প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই ওই মেলাটি এই অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মেলাতে রুপ নেয়।
অসংখ্য দোকান-পাট আর হাজার রকমের জিনিস-পত্রের বিপুল সমাহারে মেলা থাকে পরিপূর্ণ। প্রচুর মানুষের সমাগমে জনসমুদ্রে পরিণত হয় মেলার মাঠ। মাছ-মাংস, মিষ্টি-মিঠাঁই, খেলনা-প্রসাধনি, ঘর-গৃহস্থালি , ফার্নিচার থেকে শুরু করে মানুষের নিত্য চাহিদার সব কিছুই মেলে এ মেলায়। থাকে বিনোদনের হরেক রকম ব্যবস্থা। মানুষের হাসি-কান্না, শিশু-কিশোরের কলকাকলি, বাঁশি ঝুনঝুনির শব্দে মেলার বিরাট প্রাঙ্গণ থাকে মুখরিত।
লক্ষণীয় বিষয় হলো এই যে, মেলা উপলক্ষে শুধু বড়রিয়া তে নয়, মেলার প্রভাব পড়ে উপজেলার সহ আশপাশের জেলা ও উপজেলাতেও।